বাক্‌ ১০৯ : অনুপম বলছি


।। বালক রাস্তায় ১ দোকানে দেখল- “এখানে জন্মদিনের কেক ও পনীর পাওয়া যায়।” সে বাবার হাত ধরে টেনে বলল, “বাপি, আমি এবার জন্মদিনে কেক কাটব না। পনীর কাটব।” এ ১টা ঘটনা। অন্য ১টা ঘটনা আরো মজার। মাধ্যমিকে ১৫ জন ছাত্রী একসঙ্গে ইংরেজিতে ৮৫ পেল। তাদের সকলের ইংরেজির নম্বরের যোগফল ওটা। ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল অবিশ্যি ইংরেজিতে একাই ৮৫ পেয়েছে। এ থেকে কী বুঝবেন? এটাই বুঝুন, ফার্স্ট গার্ল একাই ওই ১৫ জন মেয়ের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলতে পারবে। তাই না? এই যে ২টো ঘটনা, বাংলা কবিতার সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে তাদের বড্ড মিল খুঁজে পাই আমি। প্রতিবাদ, তস্য প্রতিবাদ, মিছিল, কন্ডোম, ললিপপ, পুরস্কার, তিরস্কার, শাসানি, আশ্বাস, কবিতা উৎসব, সভাকবি, মহাকবি, দাঁড়াকবি সব মিলিয়ে এই দুটো ঘটনা যেন কোথায় আমাকে কিছু ইশারা দ্যায়! কোথায় দ্যায় বলুন তো? চলুন, ভাবতে ভাবতে ‘বাক্‌ ১০৯’-এর লেখাগুলো পড়তে যাই।।

বাক্‌ ১০৯ : অমিত বিশ্বাস



আধুনিক বাঙালী পরাবাস্তববাদের আদিরূপের কারিগর শিল্পী ধর্মনারায়ণ দাশগুপ্ত

                                                    পাঁজরের ভিতরে
                                                    ওটা কি টিক্‌টিক্‌
                                                    কাঁটা নেই স্প্রিং নেই
                                                    সারাক্ষণ চলে ঠিক!



এক নীলাভ নগ্ন নারীদেহ চিত্রপট জুড়ে অবস্থান করছে, অনেকটা শোয়ার ভঙ্গিতে। লালচে গোলাপী কোঁকড়ানো কেশদামের অধিকারিণীর বাঁ হাতে একটি সবুজ সাপ জড়ানোরঙ নির্বাচনে সাপের বিষাক্ত চরিত্রটি প্রকাশ পায়। সাপটির দ্বিখন্ডিত জিভ আর নারীটির জিভ যেন সঙ্গমে আগ্রহী। এইটুকু বর্ণনা পড়ে কেউ বলে দেবে এটা হলিউড অথবা ফরাসী চলচ্চিত্রের কোনো বিকৃত কামদৃশ্য। এরপর যদি ছবিটির দিকে তাকাই তবে প্রথমে ধরা দেবে এক স্নিগ্ধ আবেশময় পরিমণ্ডল, আরো পড়ে  ধীরে ধীরে যখন ছবির গভীরে প্রবেশ করব তখন উন্মীলিত হবে এক বঙ্গীয় পরাবাস্তব ... যার কল্পনা অন্তত ভারতীয় চিত্রকলায় যেন prototype

ধর্মনারায়ণ দাশগুপ্ত জন্মেছিলেন ত্রিপুরার ধর্মনগরে ঊনকোটি পাহাড়ের কোলে এক জায়গায়, ১৯৩৯। বাবা ছিলেন ত্রিপুরা মহারাজের রাজকর্মচারী, সেই সূত্রে ঘুরে বেড়িয়েছেন রাজ্যের নানা জায়গায়। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে শিল্পী হবে, এ নিয়ে আপত্তি ছিল অভিভাবকের। ফলে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে সোজা শান্তিনিকেতনের কলাভবন ... যাত্রাপথের লড়াইটা সবার জানা। এখানে এসে সান্নিধ্য পেলেন দুই মহীরূথ রামকিংকর বেজ এবং বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের। শিক্ষা শেষ করার পর কলিকাতা-হাওড়ার আজীবন বসবাস।

মহানগরে এসে সমস্যা শুরু। অর্থনৈতিক সমস্যা এবং আত্মপরিচয়ের সমস্যা। প্রথমটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও পরেরটা যে বড়ই পিচ্ছিল। শান্তিনিকেতনে যে আন্তর্জাতিক পরিবেশের পরিমণ্ডল পেয়েছিলেন, কলিকাতায় এসে অনুভব করলেন আত্মপরিচয়ের সমস্যাটি এবং  তখন থেকেই এটি তাঁর প্রধান অনুসন্ধানের বিষয় হয়ে দাঁড়াল। ১৯৬০-৭০ দশকের শিল্পীরা অর্থাৎ গণেশ পাইন, শ্যামল দত্তরায়, বিকাশ ভট্টাচার্য সবাই ব্যস্ত আত্ম-অনুসন্ধানে। দল গড়লেন 'সোসাইটি অব কনটেম্পোরারি আর্টিস', ধর্মনারায়ণ যোগ দিলেন। এইপর্বে চিত্রপটে তেলরঙ, টেম্পারা, কাঁচের টুকরো, বাংলা অক্ষর, ছাপানো নামাবলী, কড়ি ইত্যাদির সমাবেশে চিত্রলক্ষণ সৃষ্টিতে মগ্ন ছিলেন শিল্পী, কিন্তু কিছুদিন পর নিজের কাজ সম্পর্কে অতৃপ্তি বাড়তে লাগল ...

 প্রতিটি শিল্পীর ব্যক্তিগত ভালো লাগা থাকে, শিল্পীকে অনুসন্ধান পর্যায় এই ভালো লাগাকে সঠিক ভাবে খুঁজে বের করতে হয়। ধর্মনারায়ণে ভালো লাগার মধ্যে ছিল ভারতীয় ভিত্তিচিত্র, অনুচিত্র, ভাস্কর্য, লোকশিল্প। একই সঙ্গে ভালো লাগত অঁরি রুশো ফার্ন লেজার এবং মার্ক শাগাল। এই দুজন আধুনিক শিল্পীর ছবির স্নিগ্ধভাব, পরাবাস্তব চেতনা এবং সরলতা শিল্পীকে মুগ্ধ করেছে। একই সঙ্গে অনুচিত্রের রচনাকৌশল, উজ্জ্বলতা, গঠন এবং লাবণ্য চেতনার গভীরে বাসা বাঁধে। কালিঘাট পটের বাঙালিয়ানা এবং বাংলার লৌকিক চেতনার পরাবাস্তব রূপ এর মেলবন্ধন শিল্পীকে নিয়ে যায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের দিকে। বেছে নিলেন সনাতনী মাধ্যম টেম্পারা। আধুনিক মনন যেটা শান্তিনিকেতনে থাকাকালীন অর্জিত হয়েছিল, সেটার বাস্তব প্রয়োগ ঘটালেন চিত্রপটে, জন্ম নিলো এক বাঙালি আধুনিক পরাবাস্তব চেতনা সমৃদ্ধ নান্দনিক রূপকল্প।



আশির দশকে new goddess শিরোনামে একটি ছবির কথা প্রথমে মনে আসে। একটি নারী উর্দ্ধবাহু দাঁড়িয়ে আছেন ঘোড়ার পিঠে, হাতে মাঙ্গলিক চিহ্ন। নারীটির চুল সবজে গায়ের রঙ হালকা বেগুনী। এঁকেছেন একটি ঘোড়ার অবয়ব কিন্তু মাথা জুড়েছেন দশটি ঘোড়ার ... এর ব্যবহার আমরা মধ্যযুগের  অনুচিত্রের উপস্থাপনার সন্ধান পাই যেখানে অশ্বশক্তি অনেকটাই নির্ভর করে সওয়ারির চরিত্রের দৃঢ়তা বোঝাতে। বাদামী পশ্চাদপট তৎকালীন ভারতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আভাস দেয় ... চরিত্রটি সহজেই অনুমেয়।




পরের অনামা  ছবিটি (১৯৮৫) আমার বক্তব্যকে সমর্থন করবে। একটি ধবধবে পাঞ্জাবি চিত্রপটের সামনে ভেসে রয়েছে, ঠিক ধবধবে নয়, কিছু জায়গায় কালচে রক্তের দাগ একটু নজর করলে দেখতে পাব। পশ্চাদপটের একেবারে শেষে গাঢ় অন্ধকার নেমেছে , তার সামনে সারি সারি গাছ গায়ে গায়ে লেগে আছে। লক্ষ্য করলে দেখব বেশ কিছু গাছ যেন ভাসমান ... শিকড়ের সাথে তার যোগ নেই অথবা ভূমিচ্যুত, যেভাবে দেখব আমরা। একটি অস্থির সময়কে ধরতে শিল্পী এখানে পরাবাস্তব চেতনার সাহায্য নিয়েছেন। ছাপচিত্র এই কাজটি রূপ দেবার দরুণ রঙ ও লাইন অনেকটাই সীমিত, সংযত অথচ অনবদ্য। 

 

এইবার সামান্য পিছিয়ে ১৯৮১ সালের 'কুর্তা' সিরিজের টেম্পারার একটি কাজ দেখি। চিত্রপটে একটি একতলা বাড়ি অনেকটাই মধ্যযুগীয়  অণুচিত্রের আদলে গড়া, পাঁচিলের পাশে কলাগাছগুলিও। হালকা বেগুনী পরাবাস্তব রঙের পশ্চাদপটে ঠিক ঘরের ছাদের এক বিপজ্জনক কোণে একটি পাঞ্জাবি কুর্তা উপস্থিত, তার বুকের ভিতর থেকে একটি ঘড়ি বেরিয়ে কোথাও ছুটে চলেছে। খোলা বুকের ভিতরের অন্ধকার এক বিদেহীর উপস্থিতি অনুভব করায়। এই টুকরো টুকরো চিহ্নগুলি আমাদের আশির দশকের নৈরাশ্যজীবনের ইতিকথার সন্ধান দেয়। 



না শিল্পী ধর্মনারায়ণ কেবল নৈরাশ্যের কথা বলেন না , জীবনের স্নিগ্ধ রূপের বর্ণনাও মূর্ত করেন। Man with flower pot শিরোনামে টেম্পারায় কৃত ছবিটি ১৯৮৪ সালে সৃষ্ট। পশ্চাদপট দূরে বেড়া দেওয়া এক খামারবাড়ি  যেখানে অনুচিত্রের মতন গাছগাছালি উপস্থিত। চিত্রপটের সামনে একটি সবজে চুলের কুর্তা পড়া ব্যক্তি উপস্থিত। আগের দুটি ছবিতে কুর্তার অবস্থা-সম্পর্কিত যে অস্থির সময় দেখা দিয়েছিল এই ছবিতে কিন্তু তার সামান্য অস্তিত্ব নেই, আছে এক স্নিগ্ধ নান্দনিক রূপ। শিল্পীর বাহ্যিক চেহারার সাথে যাঁদের পরিচয় আছে তাঁরা সহজেই বলে দেবেন এটি তাঁর আত্মপ্রতিকৃতি ... একটি ফুলগাছের টব তাঁর সেই সময়ের ব্যক্তিগত সুখের সন্ধান দেয়।



১৯৯১ সালের অনামা একটি ছবিতে আবার দেখি চিত্রপট বদলে যাচ্ছে। এক নীলাভ যুবকের মুখ দেখি যাকে বিশ্ব প্রেমিক কৃষ্ণ বলেই আমরা চিনি ... চিত্রপটের একেবারে নিচে সে ধড়বিহীন উপস্থিত, উপরে ভাসমান ধড় দৃশ্যমান যার গলা রক্তাভ কাটা। তার বামহাত মুকুট স্পর্শ করে আছে আর ডান হাত কোঁকড়ানো বেগুনি পরচুলা পরাতে ব্যস্ত। পশ্চাদপটে আবছা অবস্থানে ময়ুর, কচ্ছপ, মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে ... এক প্রেমবিহীন পরাবাস্তবতার সন্মুখে দাঁড় করায় দর্শকদের।

পাশ্চাত্য-পরাবাস্তববাদকে অস্বীকার করেননি কখনো শিল্পী ধর্মনারায়ণ দাশগুপ্ত, বরং প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ করেছেন সেখান থেকে। আত্মজীবনীতে পরিষ্কার ভাষায় লিখেছেন পশ্চিমের ফ্যানট্যাসি অনুধাবনের কথা। কিন্তু যেটা করেন নি সেটা হলো সরাসরি cut & paste ... কেন করেননি সেটা বুঝতে হলে সামান্য পিছিয়ে যেতে হবে। পরাবাস্তববাদেরও নিজস্ব বিশ্ব থাকে যেটা স্থান, কাল, পাত্র ভেদে বদলায়। ফলে ফ্রয়েডীয় রূপকল্প অথবা চিহ্ন বাঙালির রূপকল্পের সঙ্গে পুরোপুরি মিলবে না ... এটা প্রমাণ করেছিলেন শ্রদ্ধেয় গিরীন্দ্রশেখব বসু মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে লিখিত তাঁর বিবিধ প্রবন্ধে। ধর্মনারায়ণ এই বিষয়ে সজাগ ছিলেন তাই চিত্রকল্পে আনলেন নিজস্ব সংকেত ... অনেকটা বলা যেতে পারে বাঙালী পরাবাস্তবের রকম ফের। চিত্রপটে চরিত্রগুলিকে দিলেন কালিঘাট পটের আদল, অধিকাংশ ক্ষেত্রে চোখের মণির জায়গা ফাঁকা রাখলেন, নাক আঁকলেন পাশ থেকে ... সাথে জুড়লেন কিউবিজম চেতনায় দুটি নাসিকা ছিদ্র। মাথার চুল ঢেউ খেলানো কাব্যিক, পোশাকের ব্যবহার ১৯৭০-৮০ দশকের বনেদি পরিবার অথবা যুবা ফ্যাশন। রঙ নির্বাচন করলেন স্বপ্নময় ... অনেকটা পাশ্চাত্যমুখী। এতে ছবিতে এলো এক বাংলার লৌকিক চেতনার অত্যাধুনিক পরাবাস্তব রূপ।

প্রজ্ঞা শিল্পীর শিল্পকর্মে দৃশ্যত একাধিক স্তর থাকে ... কখনো কখনো চার-পাঁচটির স্তর দেখা যায়। স্বাভাবিক ভালোলাগা, স্নিগ্ধবোধ ইত্যাদি স্তর অতিক্রম করার ধৈর্য্য যদি রসিকের থাকে তবে ধরা দেয় মগ্ন চেতনার রূপলেখা, শিল্পকর্মের অত্যাধুনিক রচনা কৌশলের নান্দনিক রূপ, পরাবাস্তব রূপকল্প এবং শিল্পীর অন্তর নিহিত সত্যের সন্ধান। 



আসুন এবার ১৯৯১ সালের the kiss শিরোনামে টেম্পারা কৃত ছবিটি দেখি। চিত্রপটের নিন্মাংশে একটি কুর্তা পরিহিত পুরুষ আমেজে সিগারেট ধরিয়েছেন। বুকের কাছটি খোলা। চিত্রপটের একেবারে উপরের দিকে একটি পুরুষ মুখ ও একটি নারী মুখ পরস্পরকে জিহ্বা দ্বারা চুম্বন করতে ব্যস্ত। পশ্চাদপটে ঝাপসা রূপকল্প। অনুবাদ অপ্রয়োজনীয়।



১৯৯২ সালে ধর্মনারায়ণ এঁকেছেন শ্লেষাত্মক আত্মপ্রতিকৃতি। পূর্বের স্নিগ্ধরূপ এখানে অনুপস্থিত। সামাজিক মানসিক টানাপোড়েনে জর্জরিত এক মাঝবয়সী ব্যক্তির যেন বার্দ্ধক্য প্রাপ্তির গল্প।



১৯৯৪ সালে আবার ফিরলেন স্নিগ্ধ শৈলীতে।  এক মাঝারী বয়স্কা ভাসমান নারী পুরো চিত্রপট জুড়ে অবস্থান করেছেন।  এক যুবক তার দিয়ে চেয়ে রয়েছে। এই ছবিতে একটি ষাঁড় সদৃশ্য প্রাণীর উপস্থিতি বেশ রসের। নিচে  ডানাওয়ালা সাপের উপস্থিতিও ছবির পরাবাস্তব রূপকল্পকে সমৃদ্ধ করে। 



বার্ধক্যের দোরগড়ায় এসে স্বামী-স্ত্রীর যৌনবিহীন প্রেমচেতনার ছবির দৃষ্টান্ত ১৯৯৭ সালের টেম্পারায় কৃত অনামা ছবিটি। bird eye-view তে রচিত ছবিটির ঠিক মধ্যেখানে একটি বেগুনী চতুষ্কোণ। এই চতুষ্কোণের একপাশে পুরুষটি এক হাত দিয়ে চোখ ঢেকে চাদর গায়ে শুয়ে  আছেন, অপর পাশে নারীটি সামান্য দূরত্ব বজায় রেখে নিদ্রায় মগ্ন। একটু নজর করলে দেখব নারীটির বামহাত পুরুষটিকে স্পর্শ করে আছে ... এ এক অনুচ্চারিত প্রেমের সফল উদাহরণও বটে।

আত্মকথায় ধর্মনারায়ণ লিখেছিলেন প্রতিনিয়ত চোখের সামনে যা দেখেন হুবহু তাই আঁকার চেষ্টা করেন নি কখনো। একটি বোধ প্রতিনিয়ত কাজ করছে ভিতরে। এই বোধ বাস্তব আর কল্পনার মিলনস্থল অথবা বলা যেতে পারে অভিজ্ঞতা ও স্বপ্নের মোহনা।  বাঙালী জীবনের নানাদিক, বিশেষ করে স্ত্রী পুরুষের সম্পর্ক, তাদের প্রেম, সম্পর্ক, একাকীত্ব, অতৃপ্ত বাসনা, আশা-নিরাশাকে  ছুঁতে চেয়েছেন নিজের পরাবাস্তর চেতনার দ্বারা। শুরুর আলোচ্য ছবিটিতে তাই নারীদেহটি অনায়াসে নীল রঙে রাঙাতে পারেন শিল্পী, যে নীল রঙ আমাদের চেতনার কালী মূর্তির অনুষঙ্গ মনে করায়, বিষাক্ত সাপের চুম্বনকে অনায়াসে যে গ্রহণ করতে পারে ... এ এক মিথ ভেঙে নতুন মিথে উপনীত হবার প্রচেষ্টা।

বাংলার শিল্পকলা জগত থেকে হঠাৎই হেপাটাইটিস বি -এ আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৭ সালে বিদায় নেন শিল্পী ধর্মনারায়ণ দাশগুপ্ত।  prototype শব্দটির একটি বাংলা অর্থ খুঁজে পেলাম, 'আদিরূপ' ... শিল্পীর ১৯৭০ দশক এবং পরবর্তী কাজকর্মগুলিকে অনায়াসেই আধুনিক বাঙালি চিত্রশিল্পের পরাবাস্তব চেতনার আদিরূপ বলতে একটুও দ্বিধা নেই মনে। উনি শিল্পকলার যে নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন সেটার উত্তরসূরী সঠিক ভাবে চোখে পড়েনি এখনো ... নিশ্চয়ই অন্তরালে তার প্রস্তুতি চলছে।

অমিত বিশ্বাস
কৃষ্ণনগর
৩১/০৩/২০১৭

গর্তের অসভ্য মুখ। হিস্‌ : অনুপম মুখোপাধ্যায়






।। টি পুনরাধুনিক কবিতা।।


“Dearest, piddle on me, / Because your piddle is like hard water, / Loving dearest, shit one in my hand, / Because your shits are like amber here.” (Maffio Venier, 16th century Venetian poet)


পোড়া রোগীপোড়াদেহেকাৎ হয়ে আছে। আগুন না খেয়ে বুদ্ধ খুব রোগা। হয়ে গ্যাছে। আরেকটু ডুব মারলেহাড়। বাদামিও মিলিয়ে গ্যাছে সেখানে। পাছার মাংসে তুমি। গোবিন্দকে পাবে। কোমরের ছালে রাধা। ব্যথাপুড়ে ছাই।  দণ্ড শুয়েশুয়ে কাৎ। কৃষ্ণের খৃস্টের পেরেক তো সে। নয়সরসতা শেষ হলে কোথাও একটু সত্য বাড়ে না। নাক মৃদু কেঁপে ওঠে মুখে যে রক্ত আসে লজ্জায় ঘৃণায় নয় প্রাণ ফেটে আসে
বিরাট। ১টা গর্তে বিশ্বাসকে করছি
বিশ্বাস। জ্যোৎস্না হয়ে থাকছে
১দল ভেড়া ১টাই ভেড়া
মুখের ভাপে। হাড় গলে গলে
গর্তের মুখজুড়ে
ছড়ছড় কলকল
অনর্গল
চুলমাখা চাঁদ করার শব্দ
ফুলপশম। আরতির
চুত থেকে চ্যুত হচ্ছে জ্বল
ইয়েবাড়ির দিকে। বিয়েবাড়ির আগে গাঁঢ় ইয়ে মারি শিশু হয়ে যাইহ্যান্ডিক্যাম থেকে ফিরে আসে দোলনাবোঝাই লোকাল ট্রেনগুলো। মাত্র ৭ সেকেন্ড ব্যক্তিগত কাল। বাঁকুড়ার কাল। বনগাঁর কাল। মহাকাল হয় না। পায়ে দলে সম্পর্কটাকে পাঁউরুটি বানিয়ে ফেলছে তোমার অমর আমার প্রেমগালিচা আর পিয়ানোর মধ্যে বিকালের অন্ধকার। গন্ধ। যে বালিশ তুলোয় ঠাসা। তার কোণে ছোট্ট ১ গোলাপ এঁকেছেক্যালামাইন কত আর মাখিয়েছে। বলো
আমার কে মুঠ্‌ খুঁজছ হে
গান নিচ্ছ লুট্‌ দিচ্ছ না
ভোর  হলে চাঁদ তো আর
গোল থাকছে না
গোলক হয়ে যাচ্ছে
বিয়ে করার পরে মারলে শিশু হয় না। বিচিত্র অবস্থায় আমি তোমার পেছনে। ঘরের দিকে মুখ রেখে মহকুমা সূর্য সাক্ষী রেখে ঢুকিয়ে দিলাম এই। কোন কোন পাতায় পোকা রেখেছিলে। কটা ডানা ঝরে গিয়েছিল। আলাদা আলাদা দণ্ডের শিরা টিপে দ্যাখো আমার এই উদয়ে জড়িয়ে রাখার কিছু নেই। নাই। অস্তকেই সাক্ষী মানলাম
শীৎকারের কালে। প্লিজ
তুৎলিও না
চন্দ্রাবলী সোনা
বরং
চেপে ধরো
মনভরা আর্তঢং করো
যে আর্তকে জানে। সে আর্ত হয়ে যায়। যতক্ষণে শেষ হয় বসনের ক্রিয়া যুবতীর শেষ কোনো অপমান নেই। আর্তের গভীরে থাকে অ্যাডাল্ট পিকচার। এ মার্কা ছবি দেখলে পুনর্জন্ম হয় কুকুরের পিঠে হয় পথের সঙ্গম। খালিহাতে এসেছিলে হাত ধোও ফেরো। টগর গাছের পাশে। ১ সতেরর মেয়ে। কোলে। বিড়ালের লোম রং চালধোয়া সাদা। তোমার নির্লোম door দ্বার দোর মোছা হোকফুঁ দিই। বার্নল লাগাই



                                                                                                                   (চিত্রঋণ : Belkis Ayon)