বাক্‌ ১০৯ : বিশ্বরূপ দে সরকার




শ্মশান ভাষ্য 

রজনীগন্ধা ঠিক মতো তোমার মুচকি হাসিটা ছুঁতে পারলো কিনা জানিনা
তুমি সন্ধের ভেতর পাখিটি ডুবিয়ে দিলে
আমি কিচ্ছু না খেয়ে তোমার নিঃশ্বাসের বেনারসী সরিয়ে দেখলাম
ঊরুর খানিকটা লাল, ঘুমের ডালপালার ফাঁকে তোমার জমানো ট্রাজেডি
ফুল ভর্তি খাটে একটা রিসিভার রেখে দেব ভেবেছিলাম
সাড়া দেবে না জানি, মারবে না, বকবে না আর কোনোদিন
শুধু হুবহু একইরকম দেখতে একটা শীতরাত্রি পরিয়ে বলবে 
যা একটা মুখাগ্নি ধার করে নিয়ে আয় মালাকারের দোকান থেকে...

আমি কি পারি কলসি করে জল প্রচলন করতে?
ক্ষ্যাপা চোরা, অসমাপ্ত ধুপকাঠি, সাবান, এমন কি শ্রীমৎ ভাগবত
উড়ে যাচ্ছে তোমার বিয়ের আগের সেই হারমোনিয়ামের রুপালী পালকে
আলতো অনুভব হচ্ছে প্লেটের মধ্যে ঢেলে নেওয়া চা আর বিস্কুটের কৌটো
চোখে তুলসিপাতা নেই, চরা পড়া আত্রেয়ীর পারে ফর্সা স্নেহ
গোড়ালি ডুবিয়ে আছো----
এখনই কান্নার শ্বাসকষ্টে চিতা জ্বলবে, কাঁচা বাঁশের খোঁচায় ঝুরো হয়ে
আকাশে আগুনের বৃষ্টি উড়বে, উড়ে যাবে সেই কিশোরী কাটা দাগ 
শ্রীযুক্তার ঠোঁটে কোনোপ্রকার রাগই আর বোঝা যাবে না 
হাতের ডৌলের এমন পদক্ষেপ দেখা যাবে না আর কোনোদিন
কেবল অপেক্ষায় আছে নাভি, জামিন অযোগ্য নাভি 
চাঁদের ভ্রূণের মতো... কেউ বল্লো জল দাও, শান্ত করো
নদীর আবরণ খুলে নেওয়া জল তখন সংযোগ হচ্ছে ...
সঙ্গম হচ্ছে শেষবার... আগুনের নৃত্যের পরে এই শীত রাত্রি, নেশা, চৈতন্য, 
পশ্চিমের গাছ থেকে পাখপাখালির অনুভব খুলে আসছে
আগুন নামছে জলে... 
কলসির দিকে আর তাকাবো না
এবার লিখে দেবো স্নান ... ডাকটিকিট ...
লিখে দেবো মাকে ফেলে রেখে পালিয়ে গেলাম ১৫ই মার্চ ২০১৭ রাত্রি ১ টা ৩৫ মিনিট...


                                                                        (চিত্রঋণ : Wifredo Lam)

30 comments:

  1. এভাবেও বলা যায়! ধন্য কবির লেখনী ক্ষমতা।

    ReplyDelete
  2. ওহো,,, অসাধারণ,,স্নিগ্ধতার ভয়াবহ আবেশ ছড়িয়ে গেলো,,,

    ReplyDelete
  3. অনবদ্য কবিতা। স্যালুট বিশ্বরূপদা।

    ReplyDelete
  4. অসাধারণ।এই লেখাটি পড়তে পড়তে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি।

    ReplyDelete
  5. সহজ পথে গভীর বেদনার প্রকাশ, অসামান্য।

    ReplyDelete
  6. ব‌েশ কয়‌েকবার পড়লাম। শান্ত লাগছ‌ে এবং শ্রান্তও। ভাল‌ো থাকব‌েন।

    ReplyDelete
  7. নির্বাক হলাম। কুর্ণিশ বিশ্বরূপ-দা।

    ReplyDelete
  8. গলা ভারি হয়ে এলো।

    ReplyDelete
  9. বেশ আহত হলাম প্রতিক্রিয়াহীনতার ঘুমের অতলে । শান্তি ও অশান্তির মিশেল ।

    ReplyDelete
  10. নোনাজল ছাড়া আর কিই বা রেখে যেতে পারি এমন কবিতার সামনে...

    ReplyDelete
  11. এসব কবিতা পরমাত্মীয়ের মতো আঁকড়ে ধরে রাখতে হয় আমাদের------splendid

    ReplyDelete
  12. মায়ের কথা মনে পড়ে গেল ।

    ReplyDelete
  13. খুব ভালো লাগা,প্রিয় কবি♥♥♥

    ReplyDelete
  14. খুব ভালো লাগা,প্রিয় কবি♥♥♥

    ReplyDelete
  15. অনবদ্য লেখা

    ReplyDelete
  16. চোখে জল চলে এলো।এভাবেও লেখা সম্ভব!!!প্রণাম কবি

    ReplyDelete
  17. এই রকম কবিতা পড়ার পর কিছু কি বলার প্রয়োজন ..
    আমার মনে হয় না । শুধু অনুভব করে যাও
    অস্বস্তি গরমে এক পশলা ঠান্ডা বাতাসের মতো

    ReplyDelete
  18. আমার বা যাদের মা এমনই কলসির আড়ালে হারিয়ে ফেলেছি, এক অসহ্য শোক ফিরিয়ে দিলে নিরাভরণ আত্রেয়ীর পাড়ে। বোবা হয়ে যাই

    ReplyDelete
  19. অনবদ্য।এই কবিতায় মন্তব্য করতে গিয়ে হৃদয় কেঁপে উঠলো।

    ReplyDelete
  20. কিছু কিছু কবিতা এমনই হয়। একবার প্রবেশ করলে পাঠকের সলিল-সমাধি ঘটে। সেখানেই কবির সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। বেরোনোর পথ কবি স্বয়ং জানেন না। প্রথম দুটি পংক্তি প'ড়েই আমি ডুবুরির পোশাকে ঝাঁপ দিলাম জলে। সাংঘাতিক ও মারাত্মক কবিতা।

    ReplyDelete
  21. না ভালো বলবো না, সুন্দর বলবো না। হে কবি ! স্তব্ধ করলে আমায়!

    ReplyDelete